কাম ও ভালোবাসা – ধারাবাহিক বাংলা চটি – পর্ব ১০ – ভাগ ১
দেবায়ন হাত বাড়িয়ে পারমিতাকে সোফার ওপরে বসতে বলে। অনুপমা দরজা বন্ধ করে দেবায়নের পাশে এসে বসে। মেয়ের মুখের হাসি, অনাবিল প্রেমের তৃপ্তির আলোক ছটা পারমিতার অভিজ্ঞ চোখ এড়াতে পারে না। দেবায়নের আর অনুপমার দিকে তাকিয়ে পারমিতার চেহারা লাল হয়ে যায় কিঞ্চিত উত্তেজনার বশে।
পারমিতা অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে বাড়ি যাবি না? এখন থেকেই এখানে?”
অনুপমা মায়ের কথা শুনে দেবায়নকে জড়িয়ে হেসে ফেলে, “একটু না হয় আগে থেকেই এসে গেছি বরের বাড়িতে কি হল তাতে।”
পারমিতা, “হ্যাঁ, তা বেশ দেখতে পাচ্ছি। দেবায়নকে পেয়ে একদিনে আমাদের একদম ভুলে গেছিস তুই।”
অনুপমার মুখ ভার হয়ে ওঠে। চাপা গলায় উত্তর দেয়, “ভাই ছাড়া বাকি সবাইকে ভুলে যেতে পারলে ভালো।”
দেবায়ন অনুপমাকে চুপ করিয়ে বলে, “প্লিস অনু, এখন এই সব কথাবার্তা একদম নয়।”
পারমিতা, “হ্যাঁ কি কথা বলার জন্যে আমাকে ডাকা?” দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমাদের দেখে মনে হয় সব কিছু জানো, আর কি বাকি আছে বলার।”
দেবায়ন অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলে, “তোর কিছু জিজ্ঞেস করার আছে।”
অনুপমা দেবায়নের হাত মুঠির মধ্যে করে মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি একে কথা দিয়েছ যে এই উশ্রিঙ্খল জীবন থেকে বেড়িয়ে আসবে।”
পারমিতা মাথা নিচু করে মাথা দোলায়, “হ্যাঁ”।
অনুপমা, “দেবায়ন আমাকে সবকিছু বলেছে, মা। আমি প্রথমে অন্য কিছু ভাবতাম। ভাবতাম শুধু তুমি নিজের আশা আকাঙ্খার জন্যে বাবার সাথে প্রতারনা করেছ। সব কিছু শোনার পরে মনে হল, আমি কিছুটা ভুল ছিলাম, বাবাকে আর তোমাকে এতদিনে ঠিক চিনে উঠতে পারিনি। চোখের উপরে একটা পর্দা ছিল, দেবায়নের জন্য সেটা সরে গেছে। সব শুনতে শুনতে মনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার অবস্থা হয়েছিল, যদি পাশে দেবায়ন না থাকত তাহলে আমি ভাইকে নিয়ে আত্মহত্যা করতাম।”
পারমিতার সারা মুখ লাল হয়ে ওঠে। চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসে মেয়ের কথা শুনে। অনুপমা দেবায়নের হাত ছেড়ে মায়ের পাশে বসে। পারমিতার কাঁধে হাত রেখে বলে, “তোমার এত টুকু জোর ছিল না বাবাকে বাধা দেবার?”
পারমিতা মাথা নাড়িয়ে নিচু স্বরে বলে, “না, আমি লোভের বশে, তীব্র আকাঙ্খার বশে পিছলে গিয়েছিলাম। তোর বাবা আমার মাথার মধ্যে একটা ইঞ্জেকশান ঢুকানোর মতন করে আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মোহ, কাম, আকাঙ্ক্ষা, লোভ মাৎসর্য ঢুকিয়েছে। আমি বের হতে পারিনি, আমাদের মিলিত পাপের কাছে আমাদের বিবেক হেরে গেছে রে অনু।” চোখের জলে বুক ভেসে যায় পারমিতার, গাল গড়িয়ে অশ্রু টপটপ করে হাতের ওপরে পরে।
অনুপমা, নিজের মায়ের মুখ আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে বলে, “এখন কেন কাঁদছ মা, তুমি ফিরে এস, মা। আমি কথা দিচ্ছি, তুমি ফিরে এলে আমি সব ভুলে যাব।”
পারমিতা দুই চোখ বন্ধ করে রাখে, লজ্জায় পরিতাপে মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে অক্ষম হয়ে যায়।
অনুপমা বুড়ো আঙুল দিয়ে পারমিতার গালের ওপর থেকে জলের দাগ মুছিয়ে দিয়ে বলে, “আর কিছু আছে তোমার বলার।”
পারমিতা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।”
অনুপমা মায়ের গালে ছোট্ট চুমু খেয়ে বলে, “মা, ভেবে নাও এক বান্ধবীকে বলছ মনের কথা। আমি স্কুলে পা রাখার পর থেকে দুই জন পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন, এক ছাদের তলায় থেকে আমরা কত একা ছিলাম, মা। আজ এক নতুন মা তার নতুন মেয়েকে নিজের বান্ধবী হিসাবে যদি মনের কথা বলে, তাহলে কেমন হয়?”
পারমিতা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তোকে এই রকম ভাবে ফিরে পাব, এই জীবনে আশা করিনি।”
দেবায়ন পারমিতাকে বলে, “মিমি, এখন অনেক কিছু বলার বাকি, জানানোর বাকি। তুমি এবারে না বললে আমি বলে দেব অনুকে।”
পারমিতা কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। বুকের মধ্যে কথা বুনতে শুরু করে, কোথা থেকে শুরু করবে ঠিক ভেবে পায় না। অনুপমা মায়ের মুখ দেখে বুঝতে পারে যে এখন কিছু কথা বাকি যেটা মা ওকে ঠিক মতন বলতে পারছে না। পারমিতার হাতে দুই হাতে নিয়ে শক্ত করে বল দেয়। মেয়ের উষ্ণ হাতের পরশে পারমিতা বুকে বল পায়। অবশেষে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে, পারমিতা বলতে শুরু করে অঙ্কনের কথা। অনুপমা চুপচাপ শুনে যায় অঙ্কনের আসল পরিচয়। মন মানতে নারাজ যে অঙ্কন ওর নিজের ভাই নয়, ওর জেঠুর ছেলে। বাবার প্রতি ঘৃণায় সারা শরীর রিরি জোরে জ্বলে ওঠে অনুপমার। অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, দুই হাত মুঠি করে মায়ের মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। দুই চোখে অবিরাম শ্রাবন ধারা, এই বারিধারা থামবার নয়। পারমিতা সব কিছু জানানোর পরে অনুপমার মুখের দিকে জল ভরা কাতর চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
অনুপমা সব শুনে ধরা গলায় মাকে বলে, “আমার ভাই অঙ্কন, সেটাই সত্যি। তোমরা কখন বাড়িতে থাকতে না, ভাইকে আদর করে খাওয়ান, ভাইকে কোলে করে ঘুম পাড়ানো। ভাইয়ের আদর আব্দার সবকিছু আমি দিয়েছি।”
পারমিতা মেয়েকে বলে, “সেটা জানি বলেই আমি দেবায়নকে অনুরোধ করেছিলাম তোকে না জানাতে।”
অনুপমা, “ভাই কেমন আছে?”
পারমিতা, “অঙ্কন ঠিক আছে। যেহেতু তোরা কিছুই জানাসনি তাই আগের মতন আছে।”
দেবায়ন, “আমি আর অনু, এই সত্যি কোনদিন অঙ্কন কে জানাবো না, সেই বিশ্বাস টুকু রাখতে পার। কিন্তু কোন ভাবে যদি অঙ্কন এইসব ভবিষ্যতে জানতে পারে তাহলে ওর মনের অবস্থা কি হবে সেটা একটু ভাবতে হবে। আমাদের সেইদিক ভেবে একটা পরিকল্পনা করে রাখতে হবে।”
পারমিতা দেবায়নের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “দেবায়ন যখন এই কথা তোর কাছ থেকে লুকাতে পারে তাহলে ওকে আমি বিশ্বাস করতে পারি। আমি জানি হ্যান্ডসাম কাউকে কোনদিন কিছু জানাবে না।”
দেবায়ন, “অন্য কারুর কথা জানিনা, তবে এই সত্য অনুকে জানাতে হত। আমি মনের দ্বন্দে ভুগছিলাম, একদিকে তোমাকে দেওয়া কথা, অন্যদিকে আমার ভালোবাসা যার কাছ থেকে আমি কিছু লুকাব না বলে প্রতিজ্ঞা করেছি। সেই জন্য তোমাকে ডেকে তোমার আর তোমার মেয়ের মধ্যে সব কিছু পরিষ্কার করে দিতে চেয়েছিলাম।”
Comments