Bangla Golpo Choti – রতিঃ এক কামদেবী নিরবধি – ৪৩
(Bangla Golpo Choti - Roti Ek Kamdebi Nirbodhi - 43)
This story is part of a series:
Bangla Golpo Choti – আকাশ, রাহুল ও রতির জীবনে আবার ও নতুন মোড়ঃ- ১
পরদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার পর খলিল অফিসে চলে গেলে, রতি আকাশের রুমে আসলো। আকাশের হাতে একটি বই, রতির মুখ কেমন যেন উদ্বিগ্ন মনে হলো ওর কাছে। সে জিজ্ঞাসু চোখে ওর আম্মুর দিকে তাকালো। দোতলায় এখন ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই, তাই দরজা বন্ধ করার দরকার মনে করলো না রতি। সে একটা চেয়ার টেনে আকাশের পাশে বসলো। এরপরে ধীরে ধীরে বললো, “আকাশ, তুই কি আম্মুর উপর রাগ করে আছিস?”
আকাশ খুব অবাক হলো ওর আম্মুর এমন কথায়, “না তো আম্মু, কেন জিজ্ঞেস করছো এই কথা?”
“না, মানে, আমরা বেড়ানো থেকে ফিরার পর থেকে তুই তেমন কথা বলিস না আমার সাথে, কেমন যেন মন মরা হয়ে থাকিস, বাইরে খেলতে ও যাস না, রাহুলের বাসায় ও যাস না, রাহুল ও আমাদের বাসায় আসে না।”-রতি বললো ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে।
“আসলে কি বলবো, আম্মু, এতো বড় ঘটনা হয়ে গেলো আমাদের সবার জীবনে, তাই সামলে নিতে একটু সময় লাগছে। তুমি ও তো অনেকদিন ধরে রুমে বাইরে আসতে না, সব সময় বিছানায় শুয়ে থাকতে, তাই আমি ভেবেছি যে, তোমার কিছু একা একা সময় কাটানো দরকার…আসলে আমরা সবাই যদি ও অপহরন হয়েছিলাম, কিন্তু এর অনেক বড় চড়া মূল্য তো দিতে হয়েছে তোমাকে। আমাদেরকে বাচানোর জন্যেই তো তোমাকে এই কাজ করতে হয়েছে, সেদিন রাতে যা হয়েছে, সেটাতে আমাদের কারো কোন হাত ছিলো না…তোমাকে ওই লোকগুলির খেলার পুতুল হয়েই ওই সব করতে হয়েছে…”-আকাশ এই পর্যন্ত বলে থামলো। রতির চোখমুখ কেমন যেন হয়ে গেলো, মনে হচ্ছে সে যেন চোখে সামনে সেই রাতটিকে দেখতে পাচ্ছে।
“রাহুল আমার খুব কাছের বন্ধু, ওর সামনে যেতে আসলে লজ্জা লাগছে আমার, তোমাকে যেই অবস্থায় ও দেখেছে, এর পরে ও কি ভাববে আমাদের নিয়ে, সেটা নিয়ে ঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না…”-আকাশ বলতে লাগলো-“তাই পাহাড় থেকে ফিরার পর ও যখন আমাদের বাসায় আসছে না, তাই আমি ও যাই নি…নিজের মনকে একটু অন্যদিকে পরিবর্তিত করে নেয়ার চেষ্টা করছি আম্মু…”
আকাশের কথা শুনে রতির বুক ভরে গেলো, ওর ছেলেটা এমন বড় বড় ভারী ভারী কথা কোথা থেকে শিখলো ভেবে পাচ্ছে না সে। আকাশের চিন্তা ভাবনা যে ওর বয়সের তুলনায় বেশ পরিপক্ক, সেটা বুঝতে পারলো রতি।
রতি উঠে দাড়িয়ে চেয়ারে বসা আকাশকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো আর আকাশের মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আকাশের মুখটা ঠিক রতির মাইয়ের খাজে আছে এখন। আকাশ লম্বা একটা শ্বাস নিলো, রতির শরীরের সেই পুরনো সুগন্ধটা বুক ভরে টেনে নিতে লাগলো সে।
“আমার সোনা ছেলেটা এতো কিছু বুঝে? আম্মুর কষ্ট বুঝিস তুই? আমার লক্ষ্মী ছেলে…অনেক বড় হয়ে গেছিস তুই? না?…শুন বাবা…সেই রাতের কথা ভুলে যেতে চেষ্টা কর, ওই রকম রাত আর কখনও আসবে না…তুই একদম স্বাভাবিক হয়ে যা, আমি ও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি…তুই এখনই যা রাহুলের বাসায়, ওর খোঁজ খবর নিয়ে আয়…তোর নলিনী অ্যান্টি ফোন করেছিলো আজ, সে তো আর কিছু জানে না, আমাকে জিজ্ঞেস করছে, তুই কেন যাস না ওদের বাসায়…বাইরে যা, বন্ধুর সাথে সময় কাটা, তাহলে মন ভালো হয়ে যাবে, আর ওই সব কথা দ্রুত ভুলে যাবি…ঠিক আছে সোনা?”-রতি বুঝিয়ে বললো ছেলের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে।
“কিন্তু, আম্মু, ওই লোকগুলি বলেছিলো যে ওরা আসবে এখানে টাকা নিতে? তখন তুমি এতো টাকা কোথায় পাবে?”-আকাশ চিন্তিত ভঙ্গিত জানতে চাইলো।
“ওসব নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না…ওরা তো টাকা নিতে আসবেই, টাকার লোভ কি এতো সহজে কেউ ছাড়তে পারে, তবে ওরা আবার ওই সব ভিডিও ইন্টারনেটে না ছেড়ে দেয়, সেটাই দোয়া করছি মনে মনে। টাকার ব্যবস্থা আছে আমার…তোর নানু মারা যাওয়ার আগে আমাকে অনেকগুলি টাকা দিয়ে গেছে, সেগুলি আছে আমার ব্যাংকের একাউন্তে, ওখান থেকে ওদেরকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে দিবো ওদের, এই সব টাকা তো আমি তোর জন্যেই রেখেছি, ভেবে রেখেছি, তোর বিয়ের সময় খরচ করবো, এখন ওখান থেকেই কিছু টাকা উঠাতে হবে। তোর আব্বু জানে না এই টাকার কথা, দু-একদিন পরে তোকে ব্যাঙ্কে পাঠাবো, তুই গিয়ে উঠিয়ে নিয়ে আসিস ১০ লাখ টাকা…”-রতি ওর ছেলেকে বললো।
“ওয়াও, তাহলে তো আমরা আব্বুকে না জানিয়েই ওদেরকে টাকাটা দিতে পারি, তাই না আম্মু, কিন্তু আম্মু, নানু তোমাকে কত টাকা দিয়েছে?”-আকাশ জানতে চাইলো।
“না, তোর আব্বু কে কিছুই জানানো যাবে না…আর এর পরে ওরা টাকা নিতে এলে, ওদের কাছে শুধু আমি যাবো টাকা দিতে, তোকে নিবো না সাথে…তোকে আর কোন বিপদে জড়াতে চাই না আমি…”-রতি বললো।
“কি বলছো, আম্মু, একা একা ওই গুন্ডাগুলির কাছে তোমার যাওয়া তো একদম নিরাপদ না, আমার মনে হয় আমাদের কোন একটা প্ল্যান করে কিছু মানুষ সাথে নিয়ে গিয়ে ওদেরকে টাকা দেয়া উচিত, যেন আমাদের সাথের লোক দেখে ওরা আর কোন ঝামেলা না করে, আর আমাদেরকে তোমার ভিডিও ফেরত দিয়ে দেয়।”-আকাশ কোনভাবেই ওই গুণ্ডাদের কাছে ওর আম্মুকে আর পাঠাতে চায় না, কারণ ওর আম্মুকে একা পেলে ওরা যে আরও কত কিছু করতে পারে, সেটা চিন্তা করেই ওর গা শিউরে উঠছে।।
আকাশের উদ্বিগ্নতা রতি বুঝতে পারলো, সে ছেলের চুল ঝাঁকি দিয়ে ওকে আদরের কণ্ঠে বললো, “শুন, তোকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, আমি ওদেরকে সামলাতে পারবো, ওরা কথার খেলাপ করবে না, আমি জানি…কিন্তু আরও লোক তো দুরের কথা, আমি এইবার তোকে ও নিবো না, আমি একাই যাবো ওদের সাথে কাজ শেষ করতে…তুই শুধু কষ্ট করে ব্যাঙ্ক থেকে আমার টাকাগুলি তুলে এনে দিতে পারলেই আমার উপকার হবে, তবে বাবা, এই টাকার কথা তোর আব্বুকে জানাস না যেন…”-রতি ছেলেকে অনুরোধ করলো।
Comments